রেলসংযোগ হচ্ছে ঢাকা-বাংলাবান্ধা-ভারত-নেপাল-ভুটান , যুক্ত হবে চীনও
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে প্রতিবেশী তিনটি দেশের সম্মতিও মিলেছে। সরকার এরই মধ্যে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পর্যন্ত সমীক্ষাও চালিয়েছে। ইতিমধ্যে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত প্রায় ৫৭ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একনেকে পাস হলে শিগগিরই কাজ শুরু হতে পারে। পর্যায়ক্রমে এ প্রক্রিয়ায় চীনকেও যুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। রেল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা রুটে ৫৭ কিলোমিটার নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মিত হবে। এ রুটের সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হয়ে সোনামসজিদ এলাকার ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ফলে এটি বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে (বিবিআইএন) রেল সংযোগের অন্যতম রুট হবে। স্থলবন্দরটিতে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা গেলে যাত্রী ছাড়াও আমদানি-রপ্তানি মালামাল পরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) কমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘চারটি দেশের সঙ্গে রেলপথে আমাদের এক করতে পারে বাংলাবান্ধা। সেই জন্য পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত আমরা নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করব। আমাদের অংশে আমরা করব, ভারতের অংশে ভারত করবে। যেমন আখাউড়া-আগরতলা। নেপাল-ভুটানের সঙ্গে রেল সংযোগ দেবে ভারত।’ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভারত সফরের সময় দুই দেশের পরিত্যক্ত বিভিন্ন রুটে রেল সংযোগ পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময় উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী এক যৌথ বিবৃতিতে বৃহত্তর যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার কথাও বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে নতুন রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জানা যায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ভারত, নেপাল ও ভুটানের দূরত্ব অত্যন্ত কম। এর মধ্যে বাংলাবান্ধা থেকে কয়েকশ গজের মধ্যেই ভারত সীমান্ত। এই স্থলবন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার। ভুটানের দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার এবং চীন সীমান্ত মাত্র ২০০ কিলোমিটার। সম্ভাবনাময় এই বন্দরটি পাঁচটি বন্ধুপ্রতিম দেশকে একই সূত্রে আবদ্ধ করতে পারে। এ কারণে বাংলাবান্ধা হয়ে চারটি দেশের মধ্যে রেলসংযোগ স্থাপন করতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি, চিকিৎসা ও ভ্রমণে স্বল্প সময়ে কম খরচে যাতায়াত করতে পারবে সাধারণ মানুষ। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে চার দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। জানা গেছে, মূল প্রকল্প শুরুর আগে বাংলাদেশ রেলওয়ের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল জোন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ আরম্ভ করেছে। ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে ১২ কোটি টাকা খরচ করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করা হবে। এর পরই নেওয়া হবে মেগা প্রকল্প। মেগা প্রকল্পে ভারতীয় ঋণের আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। তেঁতুলিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে চারটি দেশে আমদানি-রপ্তানি, ভ্রমণসহ নানা কাজে মানুষ যাতায়াত করছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি স্থানীয়দের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। রেল যোগাযোগ শুরু হলে রাজস্ব আয় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তেঁতুলিয়াবাসী দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলাচলের দাবি জানিয়ে আসছে।’ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা বলেন, ‘বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে খুব সহজেই চারটি দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সম্ভব। আমরা সরকারের কাছে রেললাইন স্থাপনের আবেদন জানিয়ে আসছি। রেললাইন স্থাপিত হলে পঞ্চগড় তথা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর।’


Comments
Post a Comment